কিশোরগঞ্জের দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষ গুলি চরম বিপাকে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় সত্রাং এর প্রভাবে হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে অনেকের চুলোয় জ্বলবে না আগুন। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলি আধ-খোলা দোকানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বেলা ডুবার অপেক্ষায়।
বাজারের কাজ সেরে নিচ্ছেন দোকান থেকেই।অনবরত বৈরি আবহাওয়ায় কোথাও বের হবার সুযোগ নেই।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এ ঝড়ের প্রভাবে সারাদেশে ঝরছে বৃষ্টি, এর সঙ্গে রয়েছে ঝড়ো বাতাস। সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সোমবার( ২৪অক্টোবর)ভোরে সরেজমিনে জেলার হোসেনপুর পৌর এলাকার কুড়িঘাট গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যেই কোদাল-টুকরি নিয়ে বসে আছেন জনা বিশেক দিনমজুর। তাদের কেউ কাজ পাননি। শার্ট-প্যান্ট পরা কাউকে দেখলেই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করছেন, ‘ভাই লোক লাগবো নি?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে যখন লাগবে না বলেন, তখন মন খারাপ করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে থাকেন দিনমজুরেরা।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কিশোরগঞ্জে রোববার রাত থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার সকালে শুরু হয়েছে মাঝারি বৃষ্টি আবার কখনো গুড়ি বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষজন।
বৃষ্টি উপলক্ষে যেখানে খিচুড়ি-ডিম ভাজি কিংবা ভুনা মাংসের ছবিতে সয়লাব সোশাল মিডিয়া সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষজন প্রাণন্তর চেষ্টা করছেন শুধু ভাত-তরকারির জন্য।
জেলার হোসেনপুরের সাহেবের চরে দেখা যায়,ভোর না হতেই
বৃষ্টি উপেক্ষা করে সবজি বিক্রির মাচা নিয়ে বেড়িয়েছেন মোঃ ওয়াকিল মিয়া,তিনি বলেন,
"আমরা গরিব মানুষ দিন কামাই করলে দিন খায়,পোলা মাইয়া লইয়া। তুহান টুহান যায় অওক আমরার কাম ছাড়া উপায় নাই।"
দৈনিক শ্রমিক রুকুন মিয়াসহ অনেকেই বেড়িয়েছেন কোদাল ও টুকরি নিয়ে। তবে বৃষ্টির কারণে কেউ আসেনি অর্থের বিনিময়ে তাদের শ্রম কিনতে। তাই জুটেনি কাজ। এতে না খেয়েই দিন পার করতে হবে অনেককে। অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সোমবার সকাল ১০টায় মুঠোফোনে বিভিন্ন উপজেলার অনেকের সাথে কথা হলে জানা যায়,রিকশাভ্যানে কেউবা সবজি, কেউবা বাদাম বুট, শিশুদের কাপড় নিয়ে এসেছিলেন বিভিন্ন উপজেলার পৌর এলাকায়। বৃষ্টির তোড়ে পলিথিন মুড়িয়ে দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।
জেলার করিমগঞ্জের জৈনেক ফেরিওয়ালা বলেন, '‘খবরে দেখলাম কাল্লও বৃষ্টি অইবো। আমরার মতো গরিব মানুষদের হইছে জ্বালা। আইজ বেচা হইতো না। কাইলও হইতো না। পুঁজি ভাইঙ্গা খাওন লাগবো।"
জানা যায়,ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং ধেয়ে আসছে- এমন খবরে উপকূলীয় জেলাগুলিতে বিরাজ করছে আতঙ্ক। ঘুর্ণিঝড় প্রভাবে সকাল থেকে জেলার সর্বত্র বৃষ্টি ও ঝড় হাওয়া বইছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিত্রাং এর ভয়াবহতার আগাম খবরে মানুষ অনেকটা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরেছে। সিডর, আইলাসহ বিভিন্ন সময় হওয়া ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতির শিকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ফের জীবন ও সম্পদ হানির শঙ্কায় রয়েছেন।এখন জলোচ্ছ্বাস হানা দিলে এসকল উপকূলীয় মানুষের জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, সোমবার ভোর ৫টা থেকে ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পূর্ব/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এখন বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে পারে। অর্থাৎ আজ থেকে সারাদেশেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃআব্দুল মুনিব মামুন, মোবাইল: 01715496849 অফিস: 406.Rangmohol Tower (4Floor) Bondor Bazar,Sylhet-3100। Email : banglasangbad1@gmail.com