"ভোর না হতে লাঙল কাঁধে মাঠ পানে কে যায়?
সে আমাদের গাঁয়ের কৃষক, বাস আমাদের গাঁয়"
এই অমর পঙক্তিটি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে জৌলুস হারাতে বসেছে।এখন আর তেমন লাঙল কাঁধে মাঠে যেতে দেখা যায়না কৃষকদের। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষিখেতে চাষাবাদ জনপ্রিয় তাই অস্তিত্বহীনতায় গরুর লাঙ্গল চাষ।
এক সময় দেখা যেতো সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে বেড়িয়ে যেতো মাঠে। বামে, ডানে, হুট, হাট, শব্দে গরুকে তাড়া করে চলে জমিতে হাল চাষ।অনেকে নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতো। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেতো তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। বাংলার গৃহবধূরা লালপেড়ে শাড়ি পরে কোমরে খাবারের গামলা আর হাতে পানির ঘটি নিয়ে সকাল হলেই মাঠের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ ধরে খাবার নিয়ে যেত কৃষকের নিকট। কৃষকরা মাঠের প্রান্তরে হালচাষ করতো, কেউবা জমিতে বীজ বপন করতো। জমির চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ও মই ব্যবহার করে বীজ বপন করে সোনার ফসল ঘরে তুলে আনতো। এতে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ থাকতো। এসবই বইয়ের পুঁথিগাথা গল্পের মতো শোনায়।
কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর চোখে পড়ে না সে দৃশ্য। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, মহিষ, লাঙ্গল ও জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষ।
শনিবার ( ২৪ ডিসেম্বর ) কথা হয় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষকদের সাথে তারা বলেন,গরুর লাঙ্গল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। এতে জমিতে ঘাস কম হতো, আর হাল চাষের সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়তো এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হতো তেমনি ফসলও ভালো হতো। পাওয়ারটিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে। কম সময়ে বেশি জমিতে চাষে সক্ষম হওয়ায় জমির মালিকরা পাওয়ারট্রিলার দিয়ে জমি চাষ করছে। যে কৃষকরা গরু দিয়ে হাল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো কালক্রমে তারা পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ বলেন,
আদিকাল থেকেই কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো হাল, লাঙ্গল ও মই। কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতা নির্ভর যন্ত্রদিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বংলার ঐতিহ্যের ধারক গরুর লাঙ্গল। তবে এ যুগেও হোসেনপুর উপজেলার চরাঞ্চলে মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরুল কায়েস জানান, উপজেলায় চরাঞ্চলে এখনো গরুর লাঙ্গলে জমি চাষাবাদ করতে দেখা যায়। গরুর লাঙ্গলে জমির চাষাবাদে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।