১৫৭ বছরের পথচলায় দিনাজপুরের মহর্ষি ভুবনমোহন দাতব্য চিকিৎসালয়।
দিনাজপুর প্রতিনিধি :অবিশ্বাস্য মনে হলেও দুই টাকা দিয়ে বর্তমান সময়েও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে দিনাজপুরের বালুবাড়ী এলাকার মহর্ষি ভুবন মোহন দাতব্য চিকিৎসালয়। তবে আর্থিক সংকটে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সহায়তা পেলে চিকিৎসা সেবার পরিসর বাড়বে এমন আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
পুরো নাম তার মহর্ষি ভুবন মোহনকর। ১৮৬২ সালে ঢাকা থেকে শিক্ষকতার চাকরির নিয়ে দিনাজপুর বাংলা স্কুলের পন্ডিত হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজেকে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৮৬৫ সালে দিনাজপুরের বালুবাড়ীর শাহী মসজিদ সংলগ্ন বটতলায় প্রতিষ্ঠা করেন মহর্ষি ভুবন মোহন দাতব্য চিকিৎসালয় ।এতদঞ্চলে শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তার অবদান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো কিন্তু বর্তমানে আর্থিক সংকটে ভুগছে এসব প্রতিষ্ঠান তারপরও বর্তমান সময়ে মাত্র ২ টাকায় সব ধরনের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
সদর উপজেলার চুনিয়াপাড়া থেকে আগত রুগী সোনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে এবং আমরা সুস্থ হয়ে যাই।
বালুবাড়ী এলাকার টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা মাজিদুর রহমান মাজু বলেন, এখানে নিম্নবিত্ত মানুষেরা মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে সব ধরনের চিকিৎসা পেয়ে থাকে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে তাই সমাজের এবং সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
অত্র এলাকার শাহীপাড়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ও চ্যারিটি হাসপাতাল কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, সময়ের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটিকে সামর্থ্য সংশ্লিষ্ট করতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে রয়েছে আর্থিক ও জনবল সংকট। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত সংস্কার অতি জরুরী কিন্তু আর্থিক সংকটে আমরা সে কাজ করতে পারছি না।
দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রটির একমাত্র চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এদের বেশিরভাগই মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তের। এখানে আরো একজন সরকারি নারী চিকিৎসকের প্রয়োজন। কিছু কিছু রোগের ঔষধ রোগীকে বাইরে থেকে কিনতে হয় কারণ টাকার অভাবে আমরা সেগুলি দিতে পারি না। সব রকম ঔষধ সরবরাহ করতে পারলে আগামীতে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। প্রতিষ্ঠানটির সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলি কমিটিকে জানানো হয়েছে।
এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য রয়েছে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি গভর্নিং বডি। ২০০৪ সালে গঠিত এই কমিটির চারজন সদস্য এরই মধ্যে মারা গেছে। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে উজ্জীবিত করতে আর্থিক সহযোগিতা চাইলেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান ভূঁইয়া তপন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। সহায়তা পেতে যথার্থ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে বলেন তিনি।
দিনাজপুর হোমিওপ্যাথি কলেজের সরকারি অধ্যাপক এস এম শফিউর রহমান বলেন, হোমিওপ্যাথি হচ্ছে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম পথিকৃত। এই চিকিৎসাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিতে হলে সরকারকে হোমিওপ্যাথি নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিসর বৃদ্ধি করতে সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কেন্দ্র খুলতে হবে। এতে করে তৃণমূলের মানুষ উপকৃত হবে।
নামে বেনামি এতদ অঞ্চলে অজস্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য চিকিৎসালয় গড়ে তোলা এই মহর্ষি ভুবন মোহন কর মৃত্যুবরণ করেন ১৯২৭ সালে
Leave a Reply