সারা বছরই পানি থৈথৈ করে দেশের সর্ববৃহৎ ভাটি অঞ্চল কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওড় ও বাওড় গুলোতে। আশেপাশে যে কয়টি গ্রাম বা জনবসতি আছে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয় মৎস্য আহরণ করেই। তবে বর্তমানে কিশোরগঞ্জের এই ভাটি অঞ্চলে অনেকেই হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে। গ্রামের চারিপাশে হাওড়ের পানি আর ঘোড়াউতরা ও সোয়াইজানি নদীর তীর এই দুই মিলে হাস পালনের উপযুক্ত পরিবেশ হওয়ায় কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার আফিসপাড়া, মিরহাটি, নগরশিবির, মোহরকোনা, ভাটিপাড়াসহ অনেক গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ হাঁস পালন করে অর্থনৈতিকভাবে হচ্ছেন সাবলম্বী। যার যতটুকু সামর্থ আছে সেই অনুযায়ী হাওড়ের পাশে নেট বা বেড়া দিয়ে হাস চরে বেড়ানোর মত জায়গা করে দেয়। যেখানে হাসগুলো মনের সুখে হাকডাক করে আর পানিতে খেলে বেড়ায়। এই অঞ্চলের অনেকেই হাঁস পালন করে সংসার পরিচালনা করে আসছে।
জানা যায়,কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরের পূর্ব গ্রামের দুই ভাই আক্কাস মিয়া ও জহিরুল ইসলাম হাঁস পালনে সফল হয়েছেন। একই এলাকার আরো ৮ টি পরিবার হাঁস লালন-পালন করে। হাওরের পাশে হওয়ায় হাঁস পালনে অনেক সুবিধা হয় তাদের। হাঁস পালন দুই ভাইয়ের পেশা নয় নেশা হয়ে গেছে বলে জানান তারা।
আরও জানা যায়, বিগত ২৫ বছর যাবত তারা হাঁস পালন এবং হাঁস ও ডিমের ব্যবসা করেন। বছরের প্রায় ৯ মাস সময় হাঁস পালনে ব্যস্ত থাকেন তারা। হাঁস পালনের নেশায় তারা তাদের নিকলী হাওরের জমিও করে দিয়েছেন। এবছর বন্যার কারণে অনেক হাঁস মারা যায়। ফলে লোকসানে পড়তে হয় তাদের। এবছর আক্কাস মিয়া ১ হাজার ৪০০ হাঁস কিনেছিলেন। কিছু হাঁস মারা যাওয়ায় এখন ৫০০টি রয়েছে। জহিরুল কিনেছিলেন ৬০০টি হাঁস। এখন ৩৭০টি হাঁস রয়েছে।
আক্কাস বলেন, আমরা অনেক বছর যাবত হাঁস লালন-পালন করি। ৬ মাস বয়সী বাচ্চা কিনে লালন-পালন করা শুরু করি। হাঁস কেনার ১৫ দিনের মধ্যেই ডিম দেওয়া শুরু করে। প্রতিটা হাঁস ৪০০ টাকা করে কেনা পড়ে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ৯০ শতাংশ হাঁসই প্রথম ৩ মাসে ডিম দেয়। তারপর আস্তে আস্তে ডিম দেওয়া কমে যায়। ডিম দেওয়া বন্ধ হলে তখন বিক্রি করে দেই।
বর্ষার পানি কমে গেলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে হাঁস নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাই। তখন সেখানে জমিতে ধান কাটা হয়ে গেলে হাঁস জমিতে ছেড়ে দেই। জ্যৈষ্ঠ মাসে সরাইল, তারপর আশুগঞ্জ, সেখান থেকে নরসিংদীর মনোহরদীতে, তারপর খাবার ফুরিয়ে গেলে ফিরে আসেন কিশোরগঞ্জ নিকলীতে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যান ট্রলার ও পিকআপ ভ্যান দিয়ে।
তারা জানায়, হাঁসের প্রধান খাদ্য শামুক। প্রতিদিন হাঁসকে ৬০০ টাকার শামুক, ৬০০ টাকার ধানের কুঁড়া ও ২০০ টাকার পোট্রি ফিড কিনে খাওয়াতে হয়। প্রতিদিন মোট ১ হাজার ৪০০ টাকার খাবার দিতে হয় হাঁসকে। আর পরিবহনে বড় ভাই আক্কাসের খরচ হয় ৯০ হাজার টাকা, জহিরুলের খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা। তবে হাওরে বা জলাশয়ে হাঁসের জন্য প্রাকৃতিক খাবার পাওয়া যায় এবং খাবারের পেছনে প্রতিদিনের ব্যয় কমে আসে বলে জানান তারা।
জহিরুল ইসলাম জানান, গত বছর ৫০০ হাঁস কিনে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। তবে এবছর তার লোকসান হবে বলে ধারনা করছেন। বর্তমানে ৩৭০টি হাঁসের মধ্যে এখন ৫০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে বলে জানান তিনি। হাওরে আরও অনেকে হাঁস পাললেও, সবার কাছে এটা এমন নেশা নয়।
Leave a Reply