
ফারুক হোসেন ফুলছড়ির প্রতিনিধিঃ
সোনালী আঁশ নামে পরিচিত পাট চাষের অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন চাষী গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলায় চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন স্থানে পাট চাষ করা হয়েছে এবারও। অতিমাত্রায় খরায় বেশিরভাগ সময় পাটের জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে , ডিজেল ও সারের দাম বৃদ্ধি ,কৃষানের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় কে দুষলেন অনেক প্রান্তিক কৃষক । দিন দিন অলাভ জনক পণ্য হিসেবে পরিণত হচ্ছে পাটচাষ।
আজ (২০আগস্ট) রবিবার সরেজমিনে কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন আগামিতে পাট চাষ থেকে সরে আসারকথা।
ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর উড়িয়া গ্রামের পাট চাষী আব্দুর রহিম (৬০) জানান এ বছর চার বিঘে জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি বর্ষা মৌসুমের খরার কারনে ১২০ টাকা লিটার ডিজেল কিনে সেচ দেওয়া ও খুচরা বাজারের সারের মুল্য প্রতিকেজি ৩০ টাকা , অতিমাত্রায় মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কারনে পাট চাষে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত খরচ, এরপর জমি তৈরি, পাটের বীজ ক্রয় , নিড়ানি, সেচ ,সার , কৃষান দিয়ে পাট কাটা, ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে নদীর পাড়ে নিয়ে আসা, নদীর পাড় থেকে নৌকা দিয়ে নদী পার করানো, আবার ভ্যান দিয়ে পচার জন্য জাগ দেওয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া সহ ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ । খরার কারনে পাটের ফলন ভালোনা হওয়ায় প্রতি বিঘা জমি থেকে পাট পাইছি ছয় মন, যার বর্তমান বাজার প্রতি মন পাটের মূল্য ২ হাজার টাকা করে ১২০০০ টাকা। খরচের তালিকা অনুযায়ী পাট চাষ এবং পাট বিক্রির মূল্য সমান সমান হয়েছে । এজন্য আমার আগামীতে পাট চাষ না করার সম্ভাবনা রয়েছে ।
একই কথা জানিয়েছেন ওই গ্রামের পাট চাষী মোঃ সৈয়দ আলী(৭০) তিনি জানান , গত ৩০ বছরে এরকম ক্ষতি সম্মুখীন হইনাই , প্রায় চার বিঘে জমিতে পাট চাষ করে অনেক ক্ষতির মুখে পরেছি ভালো ফলন হয় নাই পাট দেখতেও ভালো হয় নাই ১৮শ টাকা করে বিক্রি করেছি আমার অনেক লস হয়েছে । তিনি জানান সার এবং তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে যদি আগামী বছরও এ বছরের মত খরা হয় তবে সেচ দিয়ে পাট চাষ করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। ভবিষ্যতে পাট চাষ করবনা ।
কঞ্চিপাড়া গ্রামের পাট চাষী মো লিটন মিয়া(৪৫) জানান কিছু কিছু টিভি চ্যানেলে “পাটের বাম্পার ফলনের” খবর প্রকাশ করার কারণে পাট চাষীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা পাট চাষিরা পাটের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এবছর ভালো মানের পাটের সর্বোচ্চ মূল্য ২৪ শ টাকা তার চেয়ে একটু কম মানের পাটের মূল্য ২ হাজার এবং ১৮শ টাকা। পাট এর পাইকারি ক্রেতা গণ “বাম্পার ফলনের” খবর শুনে পাটের ক্রয় মূল্য কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি জানান সাংবাদিকগণ যদি সঠিক খবর প্রকাশ না করে তবে প্রান্তিক কৃষক হঠাৎ করেই বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন থেকে সরে আসবে জানালেন তিনি।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ মিন্টু মিয়া যানান ২০২০ -২১ সালে লক্ষ্যমাত্রা ৩৯২০ হেক্টর এবং অর্জন করতে ৩৯২০ হেক্টর যার উৎপাদন ১১৭৬০ মে. টন। ২০২১-২২ এ লক্ষ্যমাত্রা ৩৯২০ অর্জন ৪১৬০ হে. উৎপাদন ১২৪৮০ মে.টন।
২০২২-২৩ লক্ষ্যমাত্রা ৪১৭০ হে. অর্জন ৪২৮৫ হে. যাহার সম্ভাব্য উৎপাদন ১২৮৫৫মে.টন ধরা হয়েছে, এবছর তিন হাজার পাট চাষীকে ১ কেজি করে পাটের বীজ সরবরাহ করেছি। তিনি আরো জানান অতিমাত্রায় খরার কারণে কৃষকের অভিযোগ সঠিক। কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে প্রতি বছরে বাড়ছে পাট চাষের জমি উৎপাদন ও অর্জন হচ্ছে বেশি। অপরদিকে প্রান্তিক কৃষকদের মুখে মলিন হাসি।
এভাবে অনেক প্রান্তিক চাষী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে , আগামীতে পাট চাষীদের সরকারিভাবে প্রণোদনা সহ পাট চাষের দ্রব্যাদি মূল্য কমানো না গেলে পাট চাষ থেকে সরে আসবেন অনেক কৃষক।
Leave a Reply