জ্যৈষ্ঠ মাসের মিষ্টি ফলের সমারোহ আর মৌ মৌ গন্ধ জানান দেয় এটা মধুমাস। আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস আর জামের সমারোহ এখন গ্রামে গ্রামে। পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারগুলোতে মৌসুমী ফল ক্রয়-বিক্রয়ে এখন উৎসবের আমেজ। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু দেশের অন্যতম সেরা। এই লিচু রসে টুইটম্বুর। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। খেতে সুস্বাদু। আকারে বড়।সরেজমিনে দেখা যায়, বাতাসের তালে, গাছের পাতার ফাঁকে লাল হয়ে দোলছে আর দোলছে। দেখে যেন জিভে জল এসে যায়।গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠান, বাড়ির সামনের অংশ, পুকুরপাড় ও খেতের আইলসহ সব জায়গায় শুধু লিচু গাছ।
জানা যায়- ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে লিচু চাষের ঐতিহ্য মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে। এ লিচু দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’ নামে।
গ্রামে ঢুকতেই গাছে গাছে গোলাপি রঙের মনকাড়া লিচু চোখে পড়ে। অনেকে গাছ থেকে লিচু পাড়ছেন। লিচু থেকে পাতা সরিয়ে গুনে গুনে ৫০টি করে আঁটি বাঁধছেন। কেউ লিচুভর্তি গাছ ও ডালও কিনে রাখেন। লিচু পুরোদমে পাকলে সেসব গাছ ও ডাল থেকে লিচু তুলে নিয়ে যান।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লিচু কেনার জন্য লোকজন মঙ্গলবাড়িয়ায় আসছেন। প্রতি একশ’ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। তবে এখানকার অধিকাংশ লিচুই আগাম বিক্রি হয়ে যায়। পাইকাররা অগ্রিম গাছ কিনে অতিরিক্ত দামে লিচু বিক্রি করে থাকেন। এ লিচুর চাহিদা বেশি হওয়ায় ১৫ দিনের মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এ বছর ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে মঙ্গলবাড়িয়ায়।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে এ লিচুর গাছ। পুরো গ্রামজুড়ে রয়েছে দুই শতাধিক লিচু বাগান। আট হাজারের অধিক গাছ আছে। এ বছর লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় লিচুচাষি ও পাইকাররা বেজায় খুশি। তারা এবার ভালো লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
সাধারণত মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু রপ্তানি করা হয়।
স্থানীয়দের দাবি, দু’শো বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের মো. হাশিম মুন্সি নামে এক ব্যক্তি চীন থেকে একটি লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। এভাবে উন্নত এ লিচুর জাত ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি মহসিন উজ্জামান জানান, বাজারের অন্যান্য লিচুর চেয়ে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর বাড়তি চাহিদা রয়েছে। মৌসুমে স্থানীয় বাজারে এ লিচু পাওয়া যায় না। ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যান। তিনি বলেন, মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি রঙে, স্বাদে-গন্ধেও হয় ব্যতিক্রমী গুণের অধিকারী। যে কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর একটি বাড়তি কদর রয়েছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, পাকুন্দিয়ার ঐতিহ্য মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। নিরাপদ লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে আট হাজার লিচু গাছ আছে। এ বছর ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা লিচু বিক্রি হবে শুধু মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে।
Leave a Reply