সিলেটের সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ইমরান আহমদ নির্বাচিত হলে আসনটি বিএনপির জন্য হাত ছাড়া হয়ে যায় আসনটি। এই তিনটি উপজেলায় বসবাসরত বিএনপির দলীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা হয়েছেন গায়েবি মামলাসহ জুলুম নির্যাতনের স্বীকার। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন দীর্ঘ ১৭টি বছর। প্রাকৃতিক জনপদে ভরপুর অঞ্চল হিসাবে পরিচিত সীমান্তবর্তী এই আসনটি নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশে কয়েকজন প্রার্থী নেমেছেন জোর প্রচারনায়। সীমান্তবর্তী এই তিন উপজেলার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে দৌড়ঝাপ করা প্রার্থীদের এবং তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগের আদ্যপ্রান্ত। এ আসনে এ পর্যন্ত বিএনপির ৭ জন প্রার্থী ও জামায়াতের একজন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ভোটাররা জানান।তবে সর্বমত জরিপে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে প্রচারণা ও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সফল নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির অন্যকম সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা বদরুজ্জামান সেলিম। যেহেতু তিনি কোন রকম লুটপাট কিংবা স্বজনদ্বারা ব্যষ্টিত নয় এই আসনে। একজন পরিচন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসাবে এলাকার লোকজনের কাছে রয়েছে সুনাম।এর পরেই ছিলেন সাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সিলেট বিএনপির সব চেয়ে প্রভাবশালী নেতা। তিনিও এই আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে ছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সিলেট-১ আসন কিংবা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে আবারও নির্বাচন করতে পারেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে তার বিশ্বস্থ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে তিনি সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।প্রচারনায় মাঠে আছেন একাধিক বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী আইনজীবি জেবুন্নাহার সেলিম। সেই তালিকায় আছেন লন্ডন প্রবাসী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদ। বিএনপির আইনজীবি ফোরামের নেতা ব্যারিষ্টার হেলাল আহমদ, সাবেক বিএনপি নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান।নির্বাচনী মাঠের অনুসন্ধান করতে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী হেলাল উদ্দিন আহমদের স্বজনদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বেশ কিছু অভিযোগ উঠে আসে। যদিও আর কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রবাসী হেলাল উদ্দিন আহমদ সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। প্রবাসী নেতা ও পাশাপাশি তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের বহর গ্রামের বাসিন্ধা সাবেক চেয়ারম্যান মৃত তেরা মিয়া উরফে বতন চেয়ারম্যানের ছেলে। তার বাবা ছিলেন নন্দীর গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকারের পঠ পরিবর্তনের সাথে-সাথে তিনি লন্ডন থেকে দেশে এসে নির্বাচনী এলাকা সিলেট-৪ আসনে প্রচারণায় নামেন। হেলাল উদ্দিন আহমদ লন্ডন প্রবাসী হলেও তার স্বজনরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসন আমলে ছিলেন সিলেট-৪ আসনের সাবেক এমপি ইমরান আহমদের আস্থাভাজন ও সুযোগ-সুবিধা ভোগী লোকজন।অভিযোগ উঠে গত বছরের ৫ আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পঠ পরিবর্তন হলে হেলাল উদ্দিন আহমদের প্রত্যক্ষ মদদে সিলেট-সালুটিকর-গোয়াইনঘাট লাইনের সব রকম চোরাচালান মাদক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেন হেলাল উদ্দিন আহমদের স্বজনরা। বিগত সরকারের শাসন আমলে সালুটিকর বাজারে নিজের জমি প্রশাসন নিয়ে উদ্ধার করতে গিয়ে এই হেলাল উদ্দিনের ভাই জামাল উদ্দিনের গুলিতে প্রকাশ্যে দুইজন সাধারণ মানুষ খুন হন। এ ঘটনায় মামলা হলে জামাল উদ্দিন কারাভোগ করার পর সাজাপ্রাপ্ত হন। পরে উ”চ আদালত থেকে এখন জামিনে বাহিরে রয়েছেন। স্থীয়দের কাছে এক আতংকের নাম হেলাল উদ্দিনের ভাই জামাল উদ্দিন। লোকজন অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় না থেকে যদি সরকারি লোকজনের সম্মুখে প্রকাশ্য গুলি করে জামাল উদ্দিন দুজন নিরিহ মানুষ হত্যা করতে পারে, এবং সাজা হওয়ার পর জামিনে বেরিয়ে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ায় তাহলে তার ভাই এমপি হলে আর কতজনের লাশ পড়তে পারে তা কে জানে।এছাড়া গত ৫ আগষ্টের পর হেলাল উদ্দিনের দাপটে তার ভাই উপজেলা বিএনপিরকর্মী জামাল উদ্দিন সালুটিকর বাজারে বিভিন্ন জায়গা জমি ও দোকান লুট-পাট করেন বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।স্থানীয় সালুটিকর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জকে ম্যানেজ করে জেলা যুবদলের সদস্য ও নন্দীরগাও ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি খলিল মিয়া সালুটিকর বাজার এবং খলিলের বাড়িতে ভারতীয় চিনির গোডাউন গড়ে তুলেছেন। সেখানে ভারত থেকে নিয়ে আসা চিনির বস্তা বদল করে সিলেটসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। সেই চোরাকারবারি দলের সদস্য হলেন সেচ্ছাসেবক দলনেতা কামাল আহমদ, বহর গ্রামের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা আব্দুস সালাম (সালাম), এরা সকলেই হেলাল উদ্দিনের আত্মীয় স্বজন। সরকার বদল হলে হেলাল উদ্দিনের স্বজনরা এখন আওয়ামী লীগের সাথে মিলে মিশে চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক লোকজন জানান, হেলাল উদ্দিন আহমদ এমপি হওয়ার আগেই তার দাপটে তার স্বজনরা যে অত্যাচার জুলুম শুরু করেছে এতে বিষে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবন। তিনি নিজেই নিজের স্বজনদের কন্ট্রোল করতে ব্যার্থ হচ্ছেন।কয়েকজন বয়বৃদ্ধ লোক পরিচয় গোপন রাখা শর্তে এ প্রতিবেদক জানান, হেলাল উদ্দিনের বাবা প্রয়াত বতন মিয়া, চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি বিভিন্ন অবৈধ প্রন্তায় কোটি কোটি টাকা সম্পদের মালিক হয়েছেন। সালুটিকর বাজারে একাধিক দোকান কোটা জবর দখল করে নিজের নামে করে নিয়েছেন, নিজের গ্রামে একাধিক স্থাবর অস্থাবর সম্পদ ও করেন। এছাড়া সিলেট শহরে বাসা বাড়ির মালিক হয়েছেন। সেই সময় থেকে এই পরিবারের কাছেই এক রকম জিম্মী এলাকার সাধারণ মানুষজন। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই হেলালের ভাইয়ের হাত থেকে নিজের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে দুজন মানুষ প্রকাশ্য খুন হলে এই পরিবারের সদস্যদের নাম শুনলে এলাকার লোকজন ভয় পায়। সেই হত্যার ঘটনায় আদালত থেকে টাকা আর ক্ষমতার জোরে জামিনে বেরিয়ে আসেন জামাল উদ্দিন। এখন তিনি এলাকায় নিজের রাজত্ব্য কায়েম করেছেন। যদিও এর আগে ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে জামাল উদ্দিন পরপর দুই বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। কিন্তু একজন জুলবাজ হিসাবে তাকে এলাকার লোকজন ভোট দেয়নি।এদিকে হেলাল উদ্দিন আহমদের আপন ভাগিনা কামরান আহমদ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।তিনি জুলাই আগষ্টের ছাত্রজনতা হত্যা মামলার তালিকাভূক্ত একজন আসামী। বিগত দিনে ভোট ডাকাতিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন। এই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের কাছে আতংকের নাম কামরান আহমদ।সরকার বদল হলেও তিনি ঠিকই ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। কারণ মামা হেলাল উদ্দিন আহমদ এই আসনে এমপির টিকেট দাবিদার ও পাশাপাশি মামা জেলা বিএনপির উপদেষ্টা। সেই ক্ষমতার বলেই কামরান নিয়ন্ত্রণ করছেন এই ইউনিয়নের সকল চোরাচালান ব্যবসা। পুলিশ প্রশাসন তার ধারে কাছেও আসার সাহস পাচ্ছে না। এসব অভিযোগের কারণে হেলাল উদ্দিন আহমেদকে প্রত্যাখান করতে পারেন স্থানীয়র ভোটারগণ এমন অভিমত অনেকের। তবে হেলাল উদ্দিন আহমদ ও প্রচারণায় বসে নেই। প্রচারণা করতে গিয়ে তিনি অনেক সময় অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে হাসি-তামাশার পাশাপাশি বেফাঁস মন্তব্য করতেও শুনা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত কে দলীয় মনোনয়ন পাবেন এখন দলীয় হাইকমান্ডের উপর সেটি নির্ভর করছে।একটি সরকারি সংস্থা নিশ্চিত করে তারা বিভিন্ন এলাকার এমপি প্রার্থীদের আমল নামা সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি বিএনপির একটি গোপন সাংগঠনিক দল দলীয় মনোনয়ন বাছাইয়ের কাজ করছে। এবারের নির্বাচনে তারা পরিচন্ন ও মাঠের জুলুম নির্যাতনের শিকার প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে হারানো আসনটি পুর্ন:দ্ধার করতে চায়।এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা জয়নাল আবেদিন ফারুক একটি অনুষ্টানে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। যারা উড়ে এসে ডলার-পাউন্ড দিয়ে দলীয় মনোনয়ন কিনে নিবেন ভাবছেন তা কখনোও হবে। দলের নির্যাতিত ত্যাগী নেতাকর্মীকে অবশ্য এবার মূল্যায়ন করা হবে। তাই দল যাকে মনোনয়ন দিবে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে।উল্লেখ্য কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর নিয়ে সিলেট-৪ আসন। জাতীয় সংসদীয় আসন ২৩২। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ১২৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২লাখ ৪৬ হাজার ১১০ জন। আর নারী ভোটপার ২ লাখ ২৯ হাজার ১২ জন, এবং ১জন হিজড়া ভোটার রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃআব্দুল মুনিব মামুন, মোবাইল: 01715496849 অফিস: 406.Rangmohol Tower (4Floor) Bondor Bazar,Sylhet-3100। Email : banglasangbad1@gmail.com