কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা সিদলা ইউনিয়নের সাহেবের চর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে শাহ জালাল।
ভাগ্য উন্নয়নের আশায় জমিজমা বিক্রি ও দেনা করে পাড়ি জমায় সৌদি আরব। কিন্তু বিধিবাম। ৮ মাস যেতে না যেতেই দেশে ফেরত আসেন শাহ জালাল ।
আত্মীয়-স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবের দেনা পরিশোধের চাপ আসতে থাকে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। শেষমেস বিশ শতক জাগায় লেবু চাষের সিদ্ধান্ত নেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই লেবু থেকে লাভ আসতে থাকে। ধীরে ধীরে আত্মীয় স্বজনের দেনা পরিশোধ করে এখন তিনি স্বাবলম্বী। লেবু চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে ভাগ্য বদল করে এখন তিনি এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।শাহ জালালের বীজহীন লেবুর বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন বীজহীন লেবুর চাষ করতে।
চায়না ৩ সিডলেস লেবু এ লেবুতে ৯৫ শতাংশ বীজ থাকেনা।বিচিহীন এই লেবু খুবুই রসালো ও সুগন্ধযুক্ত। উচ্চফলনশীন এই লেবু সারাবছর গাছে পাওয়া যায়।
বেশি ফলন, রস বেশি আর চাহিদার কারণে বীজহীন লেবুতে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই অন্য ফসলের আবাদ ছেড়ে এ লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অজপাড়াগাঁয়ে বীজহীন লেবু চাষ করে মাত্র ২ বছরেই বাজিমাত করেছেন শাহ জালাল।শাহ জালালের চাচাতো ভাই প্রবাসী আব্দুল হামিদ শাহ জালালের লেবু বাগানের পাশেই ১৫ শতক জমিতে করেছেন লেবু চাষ।
আব্দুল হামিদ জানান,স্বল্প খরচে এ লেবু চাষে সাফল্যের মুখ দেখেছি আমি পরিকল্পনা করেছি প্রবাস জীবন শেষ করে আরও ২১০ শতক জমিতে লেবু চাষ করবো।বেকার না থেকে চাকুরী বা প্রবাসের জন্য ছুটাছুটি না করে লেবুর চাষে ভাগ্যন্নোয়ন সম্ভব।
সফল লেবু চাষি শাহ জালাল বলেন, ২০২০ সালে প্রবাস থেকে ধরা খেয়ে এসে ২০শতক জমি নিয়ে ওই জমিতে ২২০টি বীজহীন লেবুর কলমকৃত চারা রোপণ করি। চারা কেনা, চারা রোপণ, জমি প্রস্তুত, জমি তৈরি, সেচ ও সারসহ বিবিধ খরচ মিলিয়ে ৫০হাজার টাকা।পরের বছরেই ওইসব লেবু গাছে লেবুর ফলন শুরু হয়। এরপরের বছর বেশ চাহিদা ও দাম পাওয়ায় প্রায় এক লাখ টাকার লেবু বিক্রি করি। ২০২২ সালে প্রায় ২লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি।
শাহ জালাল আরও বলেন, এবছর লেবুর অনুকুল আবহাওয়া থাকায় ও প্রচুর ফলন আশায় অধিক দামে বিক্রি করতে পেরেছেন।। তিনি সপ্তাহে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন।ফলে তার মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেকার যুবক শাহ জালালের লেবু চাষে সাফল্য দেখতে, পরামর্শ নিতে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন। অনেকেই এ বীজহীন লেবুর বাগান করার কথা চিন্তা-ভাবনাও করছেন। অনেকেই ছোট পরিসরে শুরু করেছেন এর চাষ।
রোপণের বছর বাদে প্রতি বছর একবার ডালপালা ছাঁটা, মাটি কোপানো, প্রতি ৩ মাসে একবার নিড়ানি ও ২-৩ মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার দিতে হয়।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা, সাংবাদিক মাহফুজ রাজা জানান, এটি অল্প পুঁজিতে ভালো একটি চাষাবাদ ও লাভজনক। শাহ জালাল এ লেবু চাষের সফলতা দেখে অনেকেই লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে হোসেনপুর উপজেলা উপ-সহকারী জাহিদ হাসান রণি বলেন, বীজহীন লেবু সারা বছর ফলন দেয়। এ লেবু অধিক ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ প্রচুর রস ও সুঘ্রাণ যুক্ত।
বর্তমানে মানুষের কাছে হাইব্রিড জাতের এ বীজহীন লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আরেক সুবিধা হচ্ছে একবার এ লেবুর চারা রোপণ করলে একাধারে ১২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত এ জাতের লেবু গাছে ফলন দেয়। তিনি আরও জানান, এ লেবু চাষে যদি কেউ এগিয়ে আসতে চায় তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।