প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২০, ২০২৫, ২:৩৩ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০২৪, ১০:২৬ এ.এম
শেষ ঠিকানার কারিগর মনু মিয়া।

মাহফুজ রাজা,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
ছুটে চলেছে ঘোড়া,সওয়ারীর
পিঠে ভারি ব্যাগ। তাতে দা, চাকু, খুন্তি-কুড়ালসহ লোহার তৈরি নানা যন্ত্রপাতি। এক হাতে ঘোড়ার লাগাম আর অন্য হাতে চাবুক।নাম তার মনু মিয়া,ঘোড়ায় চড়ে এমন উদ্দাম গতির ছুটে চলা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারেন নিশ্চিত কারও মৃত্যু হয়েছে।
কারও মৃত্যুর খবর এলে এভাবেই ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যান মৃতের বাড়ি। উদ্দেশ্য একটাই শেষ ঠিকানার মাটির ঘর তৈরি করা মৃত ব্যক্তির জন্য!
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ মনু মিয়া লিখে রাখা হিসেব মতে এ পর্যন্ত তিনি ২ হাজার ৯৭০ জনের কবর খুড়েছেন।
ইসলাম ধর্মের কারও মৃত্যু হলেই দাফনের সময়টা জেনে প্রয়োজনীয় সব ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে ছুটে যান তিনি। মৃতের বাড়িতে গিয়ে বাঁশ কাটা থেকে শুরু করে নিপুণ হাতে কবর খোঁড়ার কাজ করেন মনু মিয়া। দাফন শেষ করে বাড়ি ফিরেন তিনি। এ জন্য নেন না কোন পারিশ্রমিক। এমনকি ওই বাড়ির কোন খাবারও তিনি গ্রহণ করেন না।
নিম্ন-মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান মনু মিয়ার মা সারবানুর মৃত্যু হয় ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ। মায়ের কবর তৈরিতে অংশ নেন কিশোর মনু মিয়া। সেই থেকে শুরু। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে নিজের টাকা খরচ করে কবর খুঁড়েন। বাবার জমি বিক্রি করে ঘোড়া কিনেছেন। যন্ত্রপাতি তৈরি করতে খরচ হয়েছে লাখ টাকা। সংসার চলে টেনেটুনে। এতে কোন কষ্ট নেই তার।
পাড়া পড়শীরা জানান, মনু মিয়া খুব সহজ সরল একজন ভালো মানুষ, বর্তমান সময়ের স্বার্থ ছাড়া কাউকে কোনো কাজে পাওয়া যায় না কিন্তু সেখানে মনু মিয়া বিনা পারিশ্রমিকে মানুষের বাড়িতে গিয়ে কবর খুঁড়ে আসেন এটা খুবই বিরল ঘটনা।
কিশোরগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা-সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কবর খুঁড়েছেন।এর মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সাহাব উদ্দিন ঠাকুরের মতো বিশিষ্টজনদের কবরও খুঁড়েছেন তিনি।
এলাকায় সবার কাছে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র তিনি। পরিচিতি পেয়েছেন শেষ ঠিকানার কারিগর হিসেবে।নিজের কষ্ট হলেও স্বামীর এই মহৎ কাজে সব সময় সহযোগিতা করেন স্ত্রী রহিমা আক্তার।
দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মনু মিয়া তৃতীয়। কবর খোঁড়ার কাজে বাহন হিসেবে এ পর্যন্ত তিনি চৌদ্দটি ঘোড়া কিনেছেন জমি বিক্রি করে, তার কোন ছেলে-মেয়ে নেই।
মনু মিয়া জানান, এ কাজ করতে গিয়ে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের নিকট থেকে যে ভালোবাসা পাচ্ছি, এটাও পরম শান্তির। তাই শরীরে শক্তি-সামর্থ্য থাকলে আমৃত্যু এ কাজটি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃআব্দুল মুনিব মামুন, মোবাইল: 01715496849 অফিস: 406.Rangmohol Tower (4Floor) Bondor Bazar,Sylhet-3100। Email : banglasangbad1@gmail.com
Design & Developmen By HosterCube