দিনাজপুর: দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী দুই নভেম্বর। এরই মধ্যে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে গরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ। সরকার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে গেল ২৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী এ জেড এম মেনহাজুল হক। দুই প্রার্থীর এমন উত্তেজনাকর আচরণে ক্রমেই শংকিত হয়ে পড়ছে ভোটাররা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র এ জেডএম মেনহাজুল হক বলেন, সরকারি দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বাধা দিচ্ছে ,তাদের পোস্টার লিফটের ছিড়ে ফেলছে, সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয়ে তার নেতাকর্মীদের ও পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে যা নির্বাচনের আচরণের পরিপন্থী । স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগ করো কোন লাভ হচ্ছে না।এমন বাস্তবতায় সর্বোচ্চ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এমন অভিযোগকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ আমজাদ হোসেন। তিনি আরো বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এই জেড এম মেনহাজুল হক পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন সময়ে পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা তসরুপ করেছেন। নতুন মেয়র নির্বাচিত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে এমন আশঙ্কায় তিনি পাগলের প্রলাপ বকছেন। পৌরসভা নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কোন বাধা সৃষ্টি করছে না এমন দাবি করে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন একটি উস্কানিমূলক আচরণ ।এমন আচরণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ নির্বাচনের নীতিমালার পরিপন্থী এবং নির্বাচন বাণচলের একটি নীল নকশা। জনগণকে সাথে নিয়ে এই নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। সুস্থ ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে পার্বতীপুর পৌরসভা নির্বাচন।
তবে চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এ জেডএম মেনহখজুল হকের সংবাদ সম্মেলনর ফলে ভয়-ভীতি বিরাজ করছে থেকে পৌরসভার ভোটারদের মাঝে। নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা ও পৌরসভার ভোটার মোঃ খায়রুল হক বলেন, দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি আচরণে আমরা বেশ ভয় ভীতির মধ্যে বসবাস করছি। না জানি কখন কি ঘটে যায়। ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাব কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি।
নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতাকারী মোঃ হারুন চোকদার বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ আমজাদ হোসেন ও বিএনপি স্বতন্ত্র প্রার্থী এ জেড ম্যানাজুল হকের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই দানা বেঁধে উঠছে ।যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় বাধা। এই অস্থিরতা দূর করতে না পারলে সুস্থ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
পৌর নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, প্রার্থীরা যাতে করে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলে সে নিমিত্তে সব প্রার্থীদের নিয়ে সভা সমাবেশ করা হয়েছে। সকল প্রার্থীকে আচরণবিধি মেনে চলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করা হয়েছে। কোন প্রার্থী আচরণবিধি লংঘন করছে কিনা তা আমরা গভীরভাবে মনিটরিং করছি।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুর ইসলাম প্রামানিক বলেন, ভোট গ্রহণ করা হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ভোটের দিনে মোতায়েন থাকবে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মোট ভোটার ৩০ হাজার ৭৯৯ জন।
উল্লেখ্য যে, পার্বতীপুর পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৭২ সালে। সর্বশেষ পার্বতীপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি। মাত্র ১৪ ভোটের ব্যবধানে আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন একে জেড এম মেনহাজুল হক।সীমানা জটিলতাসহ নানা কারণে নির্বাচন বন্ধ থাকে প্রায় ছয় বছর।
Leave a Reply