আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবাই চাও, রহিম উদ্দিনের ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেননা পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি”।- পল্লীকবি
জসীমউদ্দীনের আসমানি কবিতার আসমানীদের মতোই নিদারুণ করুন অবস্থায় বসবাস করছে জেসমিনের দম্পতি। পুরাতন শাড়ী আর ভাঙ্গাচোরা কিছু টিনে জোড়াতালি দেওয়া ঘরের বেড়া, মরিচাধরা টিনের চালায় পলিথিনের চাউনি৷ জীর্ণ এ ঘরে স্বামী স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে বসবাস জেসমিনের। ঘন কুয়াশায় শিশির বিন্দু টপটপে গায়ে পড়ে। শীতের কনকনে হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে ঘরকে বরফের মত আচ্ছাদিত করে রাখছে সারা রাত। হিমেল হাওয়ায় গা ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। শীত নিবারণের বস্ত্র নেই তাদের। এই নিদারুণ কষ্টের মাঝেও নির্ঘুম বা কখনো ঘুমিয়ে কাটে তাদের রাত। কখন সকাল হবে একটু রোদ অথবা লাকড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা বরফে জমা শরীরটাকে একটু হালকা গরমের উষ্ণতা দিবে? সেই প্রতিক্ষায় কেটে যাচ্ছে রাত-দিন। ঠান্ডা জনিত রোগ সারা বছর লেগেই রয়েছে জেসমিন দম্পতির। স্বামী রফিক পেশায় মাটিকাটা শ্রমিক।
তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম ধুলজুরী গ্রামে জেসমিনের ৪ শতক ভিটে বাড়ী ছাড়া নেই কোনো সম্বল। বিয়ের পূর্বে রফিক ভাগ্যন্নোয়নের আশায় বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এক খন্ড জমি বিক্রি করে এক লাখ টাকা দেন আদম বেপারীকে। কিন্তু আদম বেপারী বিদেশ না নিয়ে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিয়ের পর শেষ সম্বল জমিটা বিক্রি করে স্ত্রীকে পাঠায় দুবাই। কিন্তু মাস না যেতেই জেসমিন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসে দেশে। ফলে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ে রফিক ও জেসমিনের জীবন। জেসমিন তার স্বামী রফিককে নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। জেসমিনের দূই ছেলে ।বড় ছেলেটা হোসেনপুর সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।ছোট ছেলে জন্ম প্রতিবন্ধী। দিনমজুর স্বামীর কষ্টার্জিত উপার্জনে কোনো মতে চলছে সংসার।আর্থিক অভাব অনটনে ছেলের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের ভরণ পোষণ করাই এখন অসম্ভব।
এদিকে বৃষ্টি এলেই বাড়ে দুর্ভোগ, টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে ভেসে যায় ঘর। কালবৈশাখী ও ভারী বৃষ্টি হলেই অসহায় দম্পতি সন্তানসহ ছুটে যান অন্যের ঘরে।
জেসমিন অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন, জীবনের ৩৫ টা বছর স্বামীর সাথে এমন ভাঙ্গা ঘরে কাটাইছি। এমন ঘরে থাকতে খুবেই কষ্ট হয় ৷ একটা ঘর হলে একটু শান্তি নিয়ে মরতে পারবো।
স্থানীয় পৌরসভার ৬নংওয়ার্ড কাউন্সিলর মিছবাহ উদ্দিন মানিক বলেন, তারা খুব অমানবিক জীবনযাপন করছেন। আমরা সরকারের বিভিন্ন সহায়তা গুলো তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিয়ে আসছি৷ একটি ঘর পেলে হয়তো তারা শেষ জীবনে একটু শান্তি পাবে৷
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া পারভেজ জানান,বর্তমানে ভূমিহীন ও গৃহহীন এমন প্রকল্প চালু রয়েছে কিন্তু ভূমি আছে গৃহ নাই এমন কোনো প্রকল্প নেই। যদি এমন কোনো প্রকল্প আসে তাহলে আমরা এই পরিবারটির নাম পাঠাব।
ছবি সংযুক্ত:(জীর্ণ ঘরের সামনে জেসমিন দম্পতির ছবি)
Leave a Reply