ফারুক হোসেন গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
সংবাদ প্রকাশের জেরে দেশসেরা মাল্টিমিডিয়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দের নামে হয়রানিমুলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে ডিবি রোডে তিনঘন্টা ব্যাপি এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হোসেনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার প্রেসক্লাবসহ পাঁচটি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে হয়রানিমূলক এই মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে গত রোববার (৮জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রেসক্লাব গাইবান্ধায় এক জরুরী বৈঠকে আজকের এই মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের বরাবর স্বারকলিপি প্রদান এবং আগামী রোববার সকাল ১১ টা থেকে প্রেসক্লাব গাইবান্ধা কার্যালয়ের সামনে আধাবেলা সাংবাদিকদের প্রতীকী গণঅনশনসহ কলম-ক্যামেরা বিরতির কর্মসূচিও রয়েছে।
প্রতিবাদ কর্মসূচির শুরুতে দুর্নীতি ও সংবাদের মূল ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মামলার শিকার ঢাকাপোস্টের গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন আকন্দ এবং প্রেসক্লাব গাইবান্ধার দপ্তর সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ। পরে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সভাপতি শামীম আল সাম্য, সাধারণ সম্পাদক মিলন খন্দকার, পলাশবাড়ির রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, পলাশবাড়ি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রতন, গোবিন্দগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোপাল দত্ত, ফুলছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবু, সাংবাদিক রাসেল কবির, রবিন সেন, বিপ্লব ইসলাম, মাসুম লুমেন, শাহজাহান সিরাজ, লালচান বিশ্বাস সুমন, সালাম আশেকি ও জোবাইদুর রহমান জুয়েল।
এসময় নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ভকে আজ রাস্তায় নামতে হয়েছে। চেয়ারম্যান মোসাব্বির মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার যে অপপায়তারা করেছে তা ফলপ্রসু করতে দেওয়া হবেনা। চেয়ারম্যান মসজিদের অর্থ আত্মসাতও করবেন, সাংবাদিকের নামে মামলাও করবেন এটা মানা যায়না। এসময় বক্তারা চেয়ারম্যানের একাধিক দুর্নীতির তুলে ধরে বলেন, চেয়ারম্যান মোসাব্বির একজন গরু চোরের গডফাদার, দীর্ঘদিন থেকেই তিনি গরু চুরির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি ওই ইউনিয়নের সবধরনের জুয়ার সাথে জড়িত। তিনি ২০২১ সালের একটি হত্যা মামলার জেলখাটা আসামি। এমন কোনো দুর্নীতি নেই যা চেয়ারম্যান মোসাব্বিরের বিরুদ্ধে নেই। এসময় বক্তারা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এছাড়া বক্তারা অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান অন্যথায় বৃহত্তরও আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা।
অন্যদিকে, প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সহসভাপতি রবিন সেনের নামে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের জামাতার মানহানির মামলারও তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
প্রসঙ্গত: ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) সাধারণ এর দ্বিতীয় পর্যায়ের উপজেলা ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়নের রোস্তমের মোড়ে অবস্থিত নূরে রহমত জামে মসজিদের নামে বরাদ্দ হওয়া টিআর এর ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে মসজিদ কমিটির হাতে মাত্র ১৪ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৪১ হাজার টাকা প্রকল্প সভাপতি মহিলা সদস্যর স্বামী মাহবুর রহমান, ছয় ইউপি মেম্বর ও চেয়ারম্যান মোসাব্বির ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এছাড়া ইউনিয়নের অপর একটি প্রকল্প “জগৎরায় গোপালপুরের জাবালে রহমত জামে মসজিদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫৭ হাজার টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বির ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল হোসেনকে প্রকল্প সভাপতি বানিয়ে, মসজিদে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৩২ হাজার টাকা একাই আত্মসাত করেন। এমন অভিযোগে গত ১৬ নভেম্বর “ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে দেশ সেরা মাল্টিমিডিয়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল “ঢাকাপোস্টডটকম”।
মসজিদ সংস্কারের সরকারি অর্থ চেয়ারম্যান মোসাব্বির আত্মসাত করার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে এলাকায় বেশ চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি হয়। ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এমন দূর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দিতে গত ৮ জানয়ারি ঢাকাপোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দের নামে হয়রাণীমূলক, মিথ্যা চাঁদাবাজি ও আইসিটি আইনে মামলা করেন গরু চোর খ্যাত, হত্যা মামলার জেলখাটা আসামি চেয়ারম্যান মোসাব্বির।
ফারুক হোসেন /গাইবান্ধা
Leave a Reply