
মাহফুজ হাসান,বিশেষ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের আড়াইবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল কাদির। তার বয়স আশি ছুঁইছুঁই।অনাহারে, অর্ধাহারে নিদারুণ কষ্টে কাটছে কাদিরের জীবন। দুই মেয়ে ও এক ছেলে হাবাগোবা। মেয়েগুলোকে বিয়ে দিয়েছেন এবং একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছেলে বউকে নিয়ে আলাদা সংসারে চলে যায়। তাই এখন এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি একা।
প্রত্যুষে সামান্য পরিমাণ মটর, ছোলা কিংবা কটকটি নিয়ে বাউক কাঁধে নিয়ে বের হন। ডুকডুকি বাজিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের জানান দেয় তার আসার কথা।কেউ প্লাস্টিকের বোতল , কেউবা লোহা লস্কর দিয়ে কটকটি কিনতে আসে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফিরে সামান্য বোতল , লোহা লস্কর সংগ্রহ করে দিনশেষে মহাজনের নিকট বিক্রি করেন কাদির। মহাজনেও সময় মত টাকা দেয় না। অধিকাংশ সময় শূন্য হাতেই ফিরতে হয় বাড়িতে। যেদিন খালি হাতে বাড়িতে ফিরেন ঐদিন আর উনুনে পাতিল বসে না।
এই বৃদ্ধ বয়সে যেখানে মানুষ গৃহে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকার কথা ,সেখানে কুঁজো হয়ে বাউকে মালামাল নিয়ে চলাফেরা খুবই কষ্টকর। পেটে আহার নেই, ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করেন তিনি।কারো দয়ায় হয়তো জুটে একটা বিস্কুট আর চা, তাতে দিন চলে যায় তার। সারাদিন কষ্ট করে বাড়িতে ফিরে নিজে রান্না করে যাবতীয় কাজ করতে হয় তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাদির বলেন, হারাদিন গেরামে গেরামে টুহাইয়া লোহা-লষ্কর কাঁধে বাউকে বহন করে মহাজন নিকট বেইচ্চা যা পাই হেইডা দিয়ে নিজের ওষুধ ও খাওন কিনে শেষ হইয়া যায়। অসুস্থ শরীল লয়া বাউক নিয়ে বাইর হইচি। পেটের খাওন আর ওষুধ কিনতে অইবো। কথাগুলো বলতে বলতে দুচোখের অশ্রু চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন তিনি।
আমার বয়স ৮০ কিন্তু ভোটার আইডিতে বয়স কম থাকায় এখন কোন ভাতাই মিলছে না। কতবার অফিসে গেছি আমারে ফিরাইয়া দিছে আমার নাকি বয়স হয় নাই।একটা বয়স্ক ভাতা যদি পাইতাম তাহলে শেষ বয়সে ওষুধ আর দুই বেলা ভাত খেয়ে মরতে পারতাম। নিয়তি আমাকে কষ্টই দিলেন, সুখের ছোঁয়া দিলেন না!!
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ এহসানুল হক জানান, আব্দুল কাদেরের বয়স কম থাকায় বয়স্ক ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি ।
Leave a Reply