1. admin@dainikbanglasangbad.com : admin : admin com
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
কমলগঞ্জ থানার দারোগা জিয়াউলের ক্ষমতা বলে কথা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে গোয়াইনঘাট জুড়ে রাম-রাজত্ব কাশেম-বাবলা চক্রের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের ইউকে প্রবাসীদের ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত ক্ষমতাধর দারোগা উবাদুল্লাহ এখনো এসএমপিতে বহাল আত্রাই বান্দাইখাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অভিযোগটি সম্পূর্ন ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি গোয়াইনঘাটে সাংবাদিকদের উপর হামলার মামলায়;জামিনে থাকা আসামী’কর্তৃক বাদীর পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি নওগাঁর মান্দায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বসতবাড়িতে অতর্কিত হামলা ভাংচুর- লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ আটক ৯,, হ্যালো সিলেট এসএমপি কমিশনার ফাঁড়ির পুলিশ ও ছিনতাইকারী সামলাও পিরোজপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল সাংবাদিক সাঈদ খানের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল

আগে ঢেঁকির আওয়াজেই বুঝা যতো নবান্নের আগমনী বার্তা।

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩
  • ৫২১ বার পঠিত
মাহফুজ হাসান,বিশেষ প্রতিনিধি:
কালের বিবর্তনে আধুনিকায়নের ফলে বিলুপ্ত বাঙলার বহু ঐতিহ্য। আবার হুমকির মুখে কতোই না মনো ছুঁয়া ঐতিহ্য।তাদের একটি হলো ঢেঁকি। ঢেঁকি লোকজ ঐতিহ্যের সাথে জড়িত ধান ভানা বা শস্য কোটার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র বিশেষ। ঢেঁকি দ্বারা চাউলের ছাতু,ধান, চিড়া, মাসকালাই এর ডাল, মসলা, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি ভাঙানো হয়।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অনাদিকালের এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত।
ঢেঁকিতে ধান ভাঙতেন গ্রামের বৌ-ঝিরা তাদের সঙ্গে যোগ দিতেন পাড়ার কিশোরীরা। গ্রামের বধূরা ঢেঁকির তালে তালে তাদের বাপ দাদার আমলের গীত গেয়ে চলত।
“ও বউ ধান ভানেরে ঢেকিতে পার দিয়া ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া ও বউ ধান ভানরে”। গ্রাম বাংলার গৃহবধূদের কণ্ঠে আগে প্রায়ই শোনা যেত এ ধরণের সুর আর ঢেঁকির ঢিপ ঢিপ শব্দ। ঢেঁকির তালে কত গান ও কত প্রবাদ গাওয়া হতো গ্রাম্য মেয়েদের! ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি বিলুপ্তপ্রায়।উপজেলার প্রতিটি গ্রামে আশির দশকে ঢেঁকির ব্যবহার ছিলো চোখে পড়ার মতো। সেই ঢেঁকি আজ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে। বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে এই চিরচেনা সুর যেন প্রায়ই হারিয়ে গেছে। এক সময় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার  প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রায় সকল বাড়িতে ছিল ঢেঁকি। কিন্তু এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।যদিওবা দু-একটা চোখে পড়ে অযত্নে পড়ে আছে উঠানের কোণে উইপোকারা   বসতি করে নিয়েছে,হয়তো কিছুদিন পড়ে কোথাও আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
 একটা সময় গ্রামের ফাঁকা স্থানে বা কোনো রকম ছাউনি দিয়ে বাড়ির এক পাশে তৈরি করা হতো ঢেঁকি ঘর। শীত মৌসুমে ধান ভাঙার পাশাপাশি কলাই বড়ি বানাতে ঢেঁকি ব্যবহার হতো। সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত অথবা খুব ভোরে উঠে নারীরা ঢেঁকিতে পাড় দিত। সকালের ঘুম ভাঙতো তখন ঢেঁকির ক্যাচ-কুচ, ডুক-ঢাক শব্দে আহ্ কতোই না মনোব্রত ছিল সে শব্দ।  ঢেঁকি দিয়ে ধান ভাঙতে সর্বনিম্ন দুই জন নারী হলেই চলতো। কেউ পাড় দেয়, কেউ এলে দেয়। এভাবেই চলে ধান ভানার কাজ। বাড়িতে অতিথি এলে ঢেঁকিতে ধান কুটার তোড়জোড় শুরু হতো। এই নিয়মে চিড়ে, ছাতু তৈরি করা হতো। তারপর গভীর রাত অবধি চলতো রকমারি পিঠা-পায়েস বানানো আর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার আমেজটা ছিল খুবই উপভোগ্য। ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, পোলাও, জাউ আর ফিরনী ছিল অত্যন্ত সুস্বাদু।উপজলোর সাহেবেরচর গ্রামের বাহার উদ্দিন, খলিল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করে রেখেছেন ঢেঁকি খলিল মিয়া বলেন,আগে নবান্নের ছুঁয়া পেলেই মানুষ হুমরি খেয়ে ঢেঁকির কাছে যেতেন আর কুটতেন চাল, সুস্বাদু পিঠা তৈরির জন্য। চারদিকেই ঢেকিঁর শব্দে জানান দিতো নবান্নের কথা।
জানা যায়,ঢেঁকিতে কোটা চিড়া আর চালের গুড়ির পিঠার কোন জুড়ি ছিল না। অন্যদিকে ঢেঁকিছাটা চালে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে বলে চিকিৎসকরা রোগীকে তা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। পিঠা বানানোর অন্যতম উপকরণ চালের গুড়ো বানাতে দু’এক গ্রাম খুঁজলেও ঢেঁকির দেখা মেলে না এখন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে এখন ঢেঁকি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। দুদশক আগেও গ্রামগঞ্জের বাড়িতে দু’একটি ঢেঁকি দেখা যেত। এখন ঢেঁকির পরিবর্তে আধুনিক ধান ভাঙ্গার রাইচ মিলে চাল কোটার কাজ চলছে। আবার ডিজেলের মেশিন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়িতে শ্যালো ইঞ্জিন নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধান মাড়াই করা হয়।
 উপজেলার একাধিক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে কথা হয়, সাহেবের চর গ্রামের আব্দুল লতিফ(৮০),ছফির উদ্দিন(৭৫),চরকাটিহারী গ্রামের মুন্সুর মিয়া(৭৫) তারা জানায়,ঢেঁকিতে ভাঙা চাউলের গুড়ার পিঠা-পায়েসে স্বাধ ছিল অতুলনীয়।মেশিনে ভাঙ্গায় সেই স্বাদ শুধু স্মৃতি।
হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ বলেন,কালে কালে বিলুপ্ত শব্দটা দেশীয় ঐতিহ্যে জোর দখল স্থাপন করে চলেছে।তার ঘূর্ণিপাকেই অদৃশ্য ঢেঁকি। আধুনিক যান্ত্রিক যুগে স্থানীয় গৃহবধূদের কষ্ট অবশ্য লাঘব হয়েছে কিন্তু বিলিন হয়েছে যাচ্ছে সুনিপুণ ঐতিহ্যের ধারক-বাহক।অন্যদিকে স্বাদেরও হয়েছে সমাদি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো সংবাদ

© All rights reserved © 2023 dainikbanglasangbad.com
Design & Development By Hostitbd.Com