
মাহফুজ হাসান,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
বেড়ীবাঁধের রিষ্ট পুষ্টতার জন্য ঢোলকলমি নেহাৎ গুরুত্বপূর্ণ।এই গাছ চমৎকার বেড়ার কাজও করে। এক কথায়’ প্রাকৃতিক পর্দা’। এই ঢোলকলমি নদীতীর ও খালপাড়ের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে, ভূমিক্ষয় রোধ এবং ভাঙনরোধে ঢোলকলমি গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এছাড়াও এই ঢোল কলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গরু ছাগলে না খাওয়ায় এটা বেড়া হিসেবে দারুণ কাজ করে এবং রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবেও এই গাছ ব্যবহার করা হয়।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দিনকে দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ঢোলকলমি।
জানা যায়- আমেরিকার পেরু ও বলিভিয়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে স্প্যানিশ পাদরি সাহেবেরা সপ্তদশ শতকে হিমালয়ের কাশ্মীর ও কাংড়া উপত্যকায় গির্জার বাগানে লাগানোর জন্য নিয়ে আসেন। ধারণা করা হয়, সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতবর্ষে। এখন এটি আগাছা হিসেবেই আমাদের দেশে পরিচিতি পেয়েছে।
ঢোল কলমি, বেড়ালতা বা বেড়াগাছ নামেও পরিচিত। দেশের সব এলাকার রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে, মাঠে-ঘাটে, জলাশয়ের ধারে, খাল-বিলের ধারে সর্বত্রই চোখে পড়ে। গ্রামে অবহেলায় বেড়ে ওঠা আগাছা হিসেবে পরিচিত বেড়ালতা বা ঢোল কলমি। ঢোল কলমি গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ। এর কান্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায়। সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ফিট লম্বা হয়ে থাকে।অযত্নে অবহেলায় জন্ম নেয়া ঢোলকলমি গাছের ফুল যেকোন বয়েসি মানুষের নজর কাড়বে। পাঁচটি হালকা বেগুনি পাপড়ির ফুল দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। সারা বছরই ঢোল কলমির ফুল ফোটে।
ফুলগুলি মাইকের আকৃতি তাইতু শৈশবের খেলার সামগ্রী এই ঢোল কলমি।
এ গাছ অল্পদিনের মধ্যেই ঘন ঝাড়ে পরিণত হয়। এ গাছে বসে পাখি পোকামাকড় খায়। ফুলের মধু সংগ্রহ করতে কালো ভোমরার আনাগোনা দেখা যায়।
এক সময় কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে গ্রাম অঞ্চলে অধিকংশ পরিবার ফসলের ক্ষেত, পুকুর ও বসতবাড়ির চারপাশে বেড়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে এই ঢোল কলমি ব্যবহার করছে। কেউ কেউ কলমি গাছের সাথে নেট ও বাঁশের চটা ব্যবহার করে বেড়াকে শক্তিশালী করছে। অনেকেই অতিরিক্ত অংশ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ঢোল কলমির বীজ ও পাতায় বিষাক্ত উপাদান থাকে। এবং তেতো স্বাদের সাদা কষ থাকায় এর পাতা গরু ছাগল খায় না। তাই বেড়া হিসেবে এটা ব্যবহারের চাহিদা বেশি। ঢোল কলমি খরা ও বন্যায় সহনীয় বলে প্রতিকুল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। সহজেই মারা যায় না, খাল বিল ডোবা এবং খোলামেলা পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করে। গত ৯০ দশকে পোকার ভয়ে এ গাছ ধ্বংস করার একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। দেশজুড়ে ভয়ংকর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ঢোলকলমি গাছে থাকা একধরনের পোকা। গুজব রটে যায়, এই পোকা এতটাই ভয়ংকর যে, কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত, এমন কি স্পর্শ লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে।সারাদেশে সাধারণ মানুষ গণহারে, এমন কি স্থানীয় প্রশাসনও ঢোলকলমি গাছ কেটে সাবার করেছিল।
আতংক যখন চরম পর্যায়ে তখন টিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ পোকাটি ধরে এনে নিজের হাতের উপর ছেড়ে দিয়ে হাটিয়ে, তারপর হাত দিয়ে পিষে মেরে দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে এটি আসলে খুবই নিরীহ একটি কীট, মোটেও প্রাণ সংহারী নয়। এরপর থেকেই আতঙ্ক কেটে যায়।ঢোলকলমি আতঙ্ক, গুজব এবং মিডিয়ার ভূমিকা এখন শিক্ষার বিষয়।
উপজেলার চরকাটিহারী গ্রামের গৃহস্থ আব্দুল বাতেন বলেন, এটা খুবই উপকারী গাছ। এই ঢোল কলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গরু ছাগলে না খাওয়ায় এটা বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নদীতীর ভাঙন রক্ষা করে। অনেক সময় রান্নার কাজেও ব্যবহার করা হয়।
প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় মূল্যবান উদ্ভিদকে সংরক্ষণের ও সম্প্রসারণের জন্য সকলের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
Leave a Reply