হাওর-বাওর ও সমতলভূমির বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির একটি বিস্তীর্ণ জনপদ কিশোরগঞ্জ। এজন্য একে বলা হয় ‘ভাটির দেশ’। জেলার সর্বত্র যেন সবুজ শ্যামলিমায় আচ্ছন্ন। কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলগুলি যেন প্রকৃতির জীবন্ত রুপে জেগে থাকে বর্ষাকালে। জলরাশির থৈথৈ প্রেম প্রেম খেলা আকৃষ্ট করে পর্যটকদের, মেলে ধরে পর্যটন এলাকার মোহনীয় রূপ। হাওর অঞ্চল জুড়ে যে শত শত ছোট গ্রাম অথৈ জলরাশির বুকে জেগে আছে, তাতে মনে হবে এটি যেন একটি আলাদা দ্বীপরাষ্ট্র সৌন্দর্যের গড়াগড়ি জলরাশীর বুকে।
হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে যুক্ত করে ৩০ কিমি সাবমারসিবল আরসিসি রাস্তা, ‘অলওয়েদার রোড’। তার মাঝে ২২টি দৃষ্টিনন্দন সেতু বিশেষ করে বর্ষাকালে যখন বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলের অবিচ্ছিন্ন জলরাশিকে সাগরের মতো মনে হয়, তখন এই সড়কের সৌন্দর্যে অভিভূত হতে হয়। ফলে কয়েক বছর ধরে দেশের নানা প্রান্তের মানুষের মধ্যে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের এক দুর্নিবার আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।
শুকনো মৌসুমে যেখানে ধু-ধু প্রান্তর, বর্ষায় তা সমুদ্রসম রূপ ধারণ করে। যতদূর চোখ যায়, শুধুই অথৈ জলরাশি। ছোট-বড় ঢেউ গর্জন করে আছড়ে পড়ে তীরে। দূর থেকে ছোট ছোট গ্রামগুলোকে দ্বীপের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন হাওরের পানিতে ঢেউয়ের দোলায় ভাসছে সেসব গ্রাম। এ সময় হাওরে চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা।
রঙিন পাল তোলা নৌকাও দেখা যায়। জাহাজ আকৃতির মালামাল পরিবহনকারী বড় বড় কার্গোও সদা চোখে পড়বে। দাঁড় বেয়ে চলা নৌকা ও মাঝিদের কণ্ঠের সুরেলা গানও শোনা যায়। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা তো নিত্যদিনকার চিত্র।
বিশেষ করে বর্ষাকালের চারটি মাস হাওরের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক রূপ যেন অনাবিল সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরে। তখন দূরদূরান্তের মানুষ ছুটে আসে হাওরে। হাওরের প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত করিমগঞ্জের বালিখলা ঘাট, চামড়া ঘাট, নিকলীর বেড়িবাঁধ ও বাজিতপুরের পাটুলি ঘাট বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। শত শত রংবেরঙের ট্রলার সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা থাকে। পর্যটকরা সেগুলো দিন চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে বিস্তীর্ণ হাওরে ঘুরে বেড়ান। ট্রলারভেদে ভাড়া ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।
শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পানি নেমে যায়। হাওরের আকর্ষণ কমে যায়। এখন বর্ষার পানিও অনেকটা কমে গেছে। দু-তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি পানি বেড়ে যাবার পূর্বাভাস বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।এ ছাড়াও
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান,এ সপ্তাহ শেষে পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস আছে তখন হাওরের সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে উপভোগ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply